ডাইরিয়া ও পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
বার বার পাতলা পায়খানা হওয়াকেই সাধারণভাবে ডায়রিয়া বলে। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো ডায়রিয়া। পায়খানায় যদি শুধু মল ও পানি থাকে তাকে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত আসলে তাকে আমাশয় বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর কোন ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না, শুধুমাত্র খাবার স্যালাইনেই ডায়রিয়া ভাল হয়।
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় এবং পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। আবার ডায়রিয়ার সঙ্গে কখনো কখনো জ্বর, বমি অথবা পেটে ব্যথাও হতে পারে। বর্ষাকালে এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়, বিশেষ করে বন্যার সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারন করে।
১. Acute Watery Diarrohea (একিউট ওয়াটারি ডায়রিয়া): পাতলা পায়খানা ১৪ দিনের কম স্থায়ী হলে এবং পায়খানার সাথে রক্ত না আসলে। এটি বিপজ্জনক নয়।
২. Persistent Diarrohea (পারসিসটেন্ট ডায়রিয়া): পাতলা পায়খানা ১৪ দিনের বেশি স্থায়ী হলে। এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. Dysentery (ডিসেন্ট্রি): রক্তমিশ্রিত পায়খানা। এটি বিপজ্জনক। ডায়রিয়ার লক্ষণ ২৪ ঘণ্টায় তিনবার অথবা এর চেয়ে বেশিবার পানিসহ পাতলা পায়খানা হবে, শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, খাবারের রুচি কমে যাবে ইত্যাদি। অনেক সময় ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হয় আবার পরে অনেক ক্ষেত্রে বমি কমে যেতে পারে। জ্বর হতে পারে, তবে সেটা খুব একটা তীব্র হয় না আবার বেশিরভাগ সময় শরীর হালকা গরম থাকতে পারে।
স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক খাওয়াতে হবে। খাবার তৈরীর আগে এবং শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে অসুস্থ লোক অথবা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে। বোতলের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সিদ্ধ করা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে। ছোট শিশুদের খাওয়ানোর জন্য চামচ ব্যবহার করতে হবে।
ডায়রিয়া হলে যা যা করা যাবে না কোনভাবেই খাবার বন্ধ করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না।
স্যালাইন বানানোর নিয়ম সম্পূর্ণ এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে ঢেলে দিতে হবে অতঃপর সম্পূর্ণ স্যালাইন পানিতে ভালভাবে না মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে।
স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম একটি প্যাকেট খোলার পর সেটা থেকে বানানো স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ পরিমাণ খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে। ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, প্রত্যেকবার পাতলা পায়খানার পর ২০ থেকে ৪০ চা চামচ পরিমান খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিশুর চাহিদা অনুযায়ী খেতে দিতে হবে।
খাবার তৈরীর আগে ও শিশুকে খাওয়ানোর আগে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। ছোট শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে, চামচ ব্যবহার করতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে, বোতলের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে খাওয়ার স্যালাইন ও জিঙ্ক ট্যাবলেট সব সময় রাখা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক ট্যাবলেট খেলে ভবিষ্যতেও ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
0 Comments